ঈদ সামনে রেখে এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়েছে লাখো মানুষ। আর ফাঁকা ঢাকায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন বাজারে। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় কমেছে মাছ ও সবজির দাম। তেল-চিনি-ছোলা-পেঁয়াজের দামও কমছে। এমনকি টিসিবি’র ট্রাকের সামনেও নেই চিরচেনা সেই দীর্ঘ লাইন। তবে গরুর মাংস ও মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল সরকারি ছুটির দিনেও রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর কাঁচাবাজার ও কাপ্তান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রুই, কাতল, চিংড়িসহ সব ধরনের মাছের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। চাষ করা রুই মাছ গত সপ্তাহেও ছিল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। গতকাল সেই মাছ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। মৃগেল মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা কেজি, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ২৫০/২৬০ টাকা কেজি। চাষ করা মাঝারি আকৃতির সিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি।
একই ভাবে কমেছে শাকসবজির দামও। রমজান মাসের শুরুতে আলোচনার তুঙ্গে থাকা লম্বা বেগুনের কেজি ২০ তেকে ৩০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে আরুর দাম আগের মতোই ২০ টাকা কেজি। মাছের দাম কমার পেছনে চাহিদা কমে যাওয়াকে কারন বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। মিরপুর বাজারে মাছ বিক্রেতা আক্কাস আলী বলেন, রমজান মাসে দিনের বেলা হোটেল বন্ধ থাকায় মাছের চাহিদা এমনিতেই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম থাকে। এ ছাড়া রমজানের এখন শেষ দিক। অনেক মানুষই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে। তাই চাহিদা আরো কমে গেছে। একিসঙ্গে দামও কিছুটা কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে মাছও তুলনামূলকভাবে কম উঠছে। তবে ঈদের পর মাছের দাম বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে মাছ-সবজির দাম কমলেও বেড়েছে মাংসের দাম। গরুর মাংস কেজিতে ২০-৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০০ থেকে ৬৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ব্রয়লার মুরগিও খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কপ্তান বাজারে মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদে সবসময়ই গরুর মাংসের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দামও বেশি থাকে। এবার ভারতে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় সেখান থেকেও গরু আসতে পারছে না। তারও কিছুটা প্রভাব গরুর মাংসের বাজারে পড়ছে বলে জানান তারা। একই বাজারে মুরগি ব্যবসায়ী সেহেল রানা বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মুরগির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে বেশি দম দিয়ে মুরগি কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম ১০/১৫ টাকা বেড়েছে। আগামী ২/১ দিনে আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে আর্ন্তজাতিক মার্কেটে বুকিং রেট কমার পাশাপাশি হঠাৎ করে চাহিদা নিম্নমুখী দাম কমেছে তেল-চিনি-ছোলা-পেঁয়াজেরও। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বাড়তে থাকা ভোজ্যতেলের বাজার নিম্নমুখী। গত এক সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি তেলের দাম কমেছে দুই থেকে তিন টাকা। ভোজ্যতেলের মতো অবস্থা ছিল চিনির বাজারেও। কিন্তু আন্তর্জাতিক মার্কেটে বুকিং রেট কমতে থাকায় দেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। আমদানির পাশাপাশি দেশীয় পণ্য বাজারে আসায় গত মাসে কেজিতে অন্তত ৩ টাকা করে কমেছে পেঁয়াজ-আদা ও রসুনের দাম।