ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মিশনে ভূমিকা রাখছে জাবির “ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং”

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মিশনে ভূমিকা রাখছে জাবির “ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং”

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ৮ মার্চ, ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং দেশের রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি প্রসারে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলছে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৃথিবী প্রদক্ষিণরত কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, তুলনামূলক আলোচনা, ভূ-প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ইনস্টিটিউটটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮২ সালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং, মালয়শিয়াতে ইনস্টিটিউট অব জিওস্পাটিয়াল এন্ড রিমোট সেনসিং, চীনে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং এন্ড ডিজিটাল আর্থ, ভিয়েতনাম স্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউট) বাংলাদেশেও রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি সংক্রান্ত দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, ডিগ্রী প্রদান এবং উচ্চ গবেষণা সম্পন্ন করার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং।

স্যাটেলাইট রিমোট সেনসিং এর গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ চিন্তার অংশ হিসেবে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বপ্রথম ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করেছে । এসকল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার উপযোগী দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় নি।

এ সংক্রান্ত গবেষণা, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এটি পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেনি। পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটটি ২০১৭ সালে নতুন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন গ্রহন করে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহারে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত করতে কাজ করে চলেছে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং প্রতিষ্ঠানটি।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৩-এ প্রবর্তিত প্রথম পঞ্চম-বার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৭৩-৭৮) শিক্ষা অংশের ৪৭৫ নং পৃষ্ঠার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণাধর্মী ইনস্টিটিউট খোলার জন্য সুপারিশ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং কে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং সুনামের সাথে কাজ করে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ও মহাকাশ প্রযুক্তির এই সময়ে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং (IRS-JU), Drone, Lidar, Google earth engine ও Radar remote sensing Technology প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে।

ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং তার ভলান্টিয়ার টিম কে বিভিন্ন সময় রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি বিষয়ে ফ্রি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এছাড়াও দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই প্লাট ফরমে এনে দুর্যোগ মোকাবেলায় কিভাবে অতিদ্রুত রিমোট সেনসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যান্টমেন্টের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার উচ্চ পদস্থ একদল সেনা সদস্যদের মাঝে Application of GIS and Remote Sensing in Military navigation and mapping শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ Application of Geospatial Technologies in Community Risk Assessment শীর্ষক সেমিনারসহ ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইনস্টিটিউটটি ১৮ টি প্রশিক্ষণ কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করে।

বর্তমানে ইনস্টিটিউটটি চীনের বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় (Beihang University of Aeronautics and Astronautics), আমেরিকান মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা নাসা (National Aeronautics and Space Administration) এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টটেইন ডেভেলপমেন্ট (ICIMOD) সহ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে MoU স্বাক্ষর করে যৌথভাবে কাজ করে চলছে। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতা, জ্ঞান বিনিময় ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটটি থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি (AIT) ও চীনের বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যৌথ প্রগ্রাম চালু করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছর জুনে NASA ও USAID এর সহযোগিতায় নেপালে অনুষ্ঠিত ToT প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে একমাত্র টিম হিসেবে আই আর এস-জেইউ টিম অংশগ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনে বঙ্গবন্ধুর দর্শন বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটটি “বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল লেকচার অন সাইন্স এ্যান্ড সোসাইটি” শীর্ষক একটি লেকচার সিরিজ প্রবর্তন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের Asian Institute of Technology (AIT) এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. জয়শ্রী রায় উক্ত মেমোরিয়াল লেকচার সিরিজের প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপনের জন্য সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন, যা চলতি বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ একসিলেন্স হিসেবে ডিজিটাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে কাজ করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্র্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড বিতরণে কারিগরি সহায়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ সেক্টরকে আধুনিকায়ন (বাস ট্রাকিং সিস্টেম, ডিজিটাল রিকুইজিশন), ডিজিটাল এ্যাটেডেন্স ও এনট্রেন্সসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত কাজে সহায়তা করে চলেছে।

ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ‘গ্রাম হবে শহর’ এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রেখে চলছে ইনস্টিটিউটটি। রিমোট সেনসিং (RS) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভূ-পৃষ্ঠত্ত্ব বিভিন্ন তথ্য সমূহের পুরোনো রেকর্ড সংরক্ষণ (Archives of past records) সম্ভব যা সমসাময়িক তথ্যের সাথে তুলনা করে খুব সহজেই Trend Analysis করা যায়। যা পরিবর্তনশীল এই ভূখন্ডের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন: BBS, BANBEIS, DoE, BMD, DDM, SoB, DLRS ও LGED সহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এর ফলে একাডেমিক জ্ঞানের সাথে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাঝে সমন্বয় ঘটিয়ে পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের নিয়মিত অংশ হিসেবে ইনস্টিটিউটটি ২০১৭ সালের ২০ থেকে ২৪ আগস্ট আমেরিকার মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা NASA ও নেপালের ICIMOD এর সহযোগিতায় পাঁচদিন ব্যাপী Google Earth Engine এর উপর এক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালাসহ তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও এGeospatial Application in Disaster Management শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করে। দেশের দুর্যোগকালীন সময়ে যেমন- বন্যা, ভূমিধস ও সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভূচিত্রাবলি অতিদ্রুত যাথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সরবরাহ করার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং Youth Mappers Chapter নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে যা আমেরিকার টেকসাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১২৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads