ধর্ম

জুমাবারে সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের ফজিলত

  • প্রকাশিত ৮ জানুয়ারি, ২০২১

মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

 

মহান আল্লাহতায়ালার সম্পূর্ণ  কোরআনে কারীমই হলো ফজিলতপূর্ণ বা রহমত। এক জায়গায় মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি এই কোরআনকে মুমিনদের জন্য পাঠিয়েছি রহমতস্বরূপ। আর কাফেরদের জন্য শাস্তি বা আজাবস্বরূপ।’ অর্থাৎ এই কোরআনুল কারীমের প্রতিটি সুরা এবং আয়াতই হলো আমাদের জন্য রহমতস্বরূপ। তবে এমন কিছু বিশেষ বিশেষ সুরা বা আয়াত আছে যা আমাদের জন্য অধিক ফজিলতপূর্ণ। তম্মধ্যে একটি হলো সুরা কাহাফ। এটি একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুরা। যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এ পূর্ণাঙ্গ সুরাটি এক সঙ্গে নাজিল হয়েছে এবং এর সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতা দুনিয়াতে আগমন করেছেন। এ সুরাটি নামকরণ-এর কারণ হলো, সুরায় আসহাবে কাহাফ তথা ওই সব মুমিন যুবক উদ্দেশ্য, যারা দীনকে সংরক্ষণের জন্য নিজেদেরকে কোনো এক পাহাড়ের একটি গুহায় আত্মগোপনে রেখেছিলেন। তাদের ঘটনা বর্ণিত হওয়ায় এ সুরার নামকরণ করা হয়েছে সুরা কাহাফ।

এ সুরায় তিনটি ঘটনা : এক. ওই সব যুবকের ঘটনা, যারা ঈমান-আকিদা রক্ষা করার জন্য নিজেদের ওপর কুরবানি করে নিজেদের আবাস ছেড়ে কোনো পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে ৩০৯ বছর এক ঘুমে কাটানোর পর আল্লাহতায়ালা তাদের আবার জাগ্রত করেন। দুই. হজরত মূসা ও খিজির আলাইহিস সালামের  ঘটনা। তিন. বাদশাহ জুলকারনাইনের ঘটনা। যিনি সারা জাহানের বাদশাহ ছিলেন। সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেন। এ ঘটনাগুলোর জন্য উক্ত সুরাটি যেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি অনেক ফজিলতপূর্ণ। হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিৎনা হতে নিরাপদ থাকবে। তাঁর থেকে আরেক বর্ণনায় শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারে উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ) সুতরাং প্রথম বা শেষ ১০ আয়াত অথবা উভয় দিক দিয়ে মোট ২০ আয়াত যে মুখস্থ করবে সেও উল্লিখিত ফজিলতের অন্তর্ভুক্ত হবে। হজরত সাহাল ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায়। আর যে পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ)

এই সুরা যদি কোনো ব্যক্তি জুমার দিন  তেলাওয়াত করে তাহলে সে আরো অধিক ফজিলত লাভ করবে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর হবে। অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ জুমার নামাজ আদায়ের পূর্বে পড়বে সে ব্যক্তি সরাসরি কাবাঘর থেকে একটি নূর বা রহমতের আলোপ্রাপ্ত হবে। যা তেলাওয়াতকারীর আপন জায়গায় এসে পৌঁছাবে। এই নূর আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তার নিকট অবশিষ্ট  থাকবে। অন্য এক হাদিসে  হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ যেমনভাবে নাজিল হয়েছে সেভাবে পড়বে, তার জন্য কেয়ামতের দিন সেটা নূর হবে।’ (শোয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-২২২১)

হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ  তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সবপ্রকার ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকেও মুক্ত থাকবে।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গুনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য যে, কবিরা গুনাহ তওবাহ করা ছাড়া মাফ হয় না। তাই আমরা চেষ্টা করি মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে বেশি বেশি করে এই  ফজিলতপূর্ণ সুরা কাহাফটি  তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : খতিব, মসজিদে বায়তুন নূর, মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads