করোনা মহামারীর প্রকোপ কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সশরীরে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দশ মাস পর গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়। সংসদের অধিবেশন শেষে এ বৈঠকে মন্ত্রিসভার ছয়জন সদস্য এবং ছয়জন সচিব অংশ নেন। বৈঠকে দুটি আইন ও একটি নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি আয় বছরে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। চার বছরের মধ্যে জাহাজ নির্মাণ খাতের কর্মিসংখ্যা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ করারও সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জাহাজ নির্মাণ খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, এ শিল্প সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশ, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের টেকসই বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনাসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
সচিব বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জাহাজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন,বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বিশ্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলা হবে এ নীতিমালার লক্ষ্য। এছাড়া অধিক বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি খাতের অবদান ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। বর্তমানে জাহাজ রপ্তানিতে আয় হয় এক বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অধিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জাহাজ শিল্পে কর্মিসংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখে উন্নীত করা হবে। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।
জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের কীভাবে ঋণ সহায়তা দেয়া যায়, ট্যাক্স ও ভ্যাটের ক্ষেত্রে তাদেরকে কীভাবে একটু সুবিধা দেয়া যায়- এসব বিষয় এই নীতিমালার মধ্যে আছে। এটা (জাহাজ নির্মাণ) আমাদের জন্য অত্যন্ত গুড ইন্ডাস্ট্রি। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য জাহাজ তৈরি করতে পারব। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। উন্নত দেশগুলো সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে দূরে সরে এসেছে। তারা এখন আউটসোর্সিং করছে। চেষ্টা করছি যাতে এ ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা ক্যাচ করতে পারি। সেটা পারলে এখান থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের অবসর সুবিধাদি বৃদ্ধি, পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার এবং এ-সংক্রান্ত অটোমেশন কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান সচিব।
বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন পর বের হতে পেরেছেন এবং সুস্থ আছেন বলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) সরবরাহ করা ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দুপাশে ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। সামনের দিকে একপাশে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ কয়েকজন সচিবকে দেখা যায়। অপর পাশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনসহ কয়েকজন দৃশ্যমান ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে এজেন্ডা রিলেটেড ছয়জন মন্ত্রী ও ছয়জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য ও সচিব এবং সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে বসেছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মন্ত্রিসভা ও রিপোর্ট অনুবিভাগ) মো. আবদুল বারিক জানান, দীর্ঘদিন পর মুখোমুখি বসলো মন্ত্রিসভা বৈঠক। দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর একটি মুখোমুখি বৈঠক হয়। বাকিগুলো সব ছিল ভার্চুয়াল। আজ ফিজিক্যাল মিটিং করা শুরু হলো।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্তের পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে মন্ত্রিসভা বৈঠক রূপ পায় নতুন আঙ্গিক। মন্ত্রিসভা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সাধারণত প্রতি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। আর বিশেষ সময়ে সংসদ ভবনেও বসে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে গত বছরের ৬ এপ্রিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বশেষ মুখোমুখি বসেছিল মন্ত্রিসভা। গণভবনে সীমিত পরিসরে ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে দেখা যায়। সবাই মাস্ক পরে বসেছিলেন আলাদা আলাদা টেবিলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসসহ কয়েকজন সচিবও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলাদা টেবিলে ছিলেন।
এরপর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রথমবার ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৩ জুলাই। ওইদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে নির্ধারিত আসনে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সচিবালয় প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কনফারেন্স রুমে যুক্ত ছিলেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





