ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে রাজশাহীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া গাইবান্ধা, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, যশোর, নোয়াখালীতে ও পঞ্চগড়ে পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। একই সময় একটি মাইক্রোবাস রাজশাহীর দিকে আসছিল। কাটাখালীর কাপাশিয়া এলাকায় বাস ও মাইক্রোসাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়।
ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ১১ জন যাত্রী পুড়ে মারা যায়। আর আহত ৮ জন যাত্রীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ৬ জন মারা যান। বাকি দুইজনের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতরা হলেন, রংপুর পীরগঞ্জ থানার রাজারামপুর গ্রামের সালাহউদ্দিন, তার স্ত্রী কামরুন্নাহার, কামরুন্নাহারের বোন সামসুন্নাহার, তাদের সন্তান সাজিদ ও সাবা, পীরগঞ্জ সদরের তাজুল ইসলাম ভুট্টু, স্ত্রী মুক্তা, সন্তান ইয়ামিন, দাঁড়িকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর, বড় মজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া ও তার স্ত্রী নাজমা এবং তাদের সন্তান সুমাইয়া, সাদিয়া ও চালক ফয়সাল। বাকি ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, মাইক্রোবাসে ১৭ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা ১১ যাত্রীর সবাই পুড়ে মারা যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ৮ জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পর আরো ৬ যাত্রী মারা যায়। স্থানীয় সিটিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, ঘটনার সময় একটি বাঁশভর্তি ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি ও এক কিশোর সাইকেল চালিয়ে শহরের অভিমুখে আসছিল। একই অভিমুখে দ্রুতগতিতে মাইক্রোবাসটিও আসছিল। বিপরীত দিক থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস আসছিল।
রুহুল কুদ্দুস বলেন, মাইক্রোবাস ওই বাঁশের ভ্যানটি ওভারটেক করার মুহূর্তে বাসটি ঢুকে পড়ে এবং মাইক্রোবাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে
মাইক্রোবোসের ড্রাইভারসহ ১৭ জন যাত্রী নিহত হয়। তারা ঘটনাস্থলে আগে থেকেই একটি লেগুনা দাঁড়িয়ে ছিল। লেগুনার সাথে বাস এবং মাইক্রোরবাসের সংঘর্ষ হয়নি।
গাইবান্ধায় নিহত ২ : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পিকনিকের বাস উল্টে ঘটনাস্থলেই ২ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। সকালে উপজেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ফাসিতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা গ্রামের আব্দুল বাকির ছেলে মোহন মিয়া (১৮) ও শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ কবির (২৬)। তারা স্থানীয় শ্যামলী কনফেশনারীর বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন।
নরসিংদীতে নিহত ১ : নরসিংদীতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মোস্তফা কামাল (৩৮) নামে এক মেডিকেল অফিসারের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন হারুন অর রশিদ নামে আরো একজন ডাক্তার। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উপজেলার ভাগপাড়া প্রাণগেট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মোস্তফা কামাল পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে কমর্রত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আনাহুলা ইউনিয়নে।
সাতক্ষীরায় স্কুল শিক্ষক নিহত : সাতক্ষীরার দেবহাটায় ঢাকাগামী গ্রীনবাংলা চলন্ত পরিবহনের চাপায় সাবেক এক মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২ জন। আহত ২ জনের মধ্যে ১ জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অন্যজনকে সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোরে পথচারী নিহত : যশোরে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় আবু ওমাইয়া (৫০) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শহর তলীর মুড়লীর মোড়ে এদুঘটনা ঘটে। নিহত পথচারী শহরের আরবপুর বাঁচতে শেখা এলাকার এবং সাতক্ষীরা ঝাউডাঙ্গা গ্রামের মৃত গোলাম রব্বানীর ছেলে।
নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতা নিহত : সেনবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় জাকির হোসেন প্রকাশ সোহাগ (২৮) নামের এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত সোহাগ কাবিলপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও শায়েস্তানগর গ্রামের সুরুজ মিয়ার বাড়ির মৃত সাহেব উল্লাহ ছেলে।
পঞ্চগড়ে ট্রাকচাপায় গৃহবধুর মৃত্যু : পঞ্চগড়ে ট্রাকচাপায় করিমা বেগম (৪০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এক ইজিবাইকের সঙ্গে এক ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।