পাবনায় একটি কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্যে ৫০০ একর জমির ফসল নষ্টের অভিযোগ ওঠেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করেই কারখানা চালু করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়েছে ১০ গ্রামের ফসলি জমি। দূর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যের সংস্পর্শে পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে। জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের সরাইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে মুলাডুলির সরাইকান্দি গ্রামে বিএডিসি পানাসি (পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ) সেচপ্রকল্পের আওতাধীন কৃষি জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয় রশিদ পেপার মিল। গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রামের পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল বন্ধ করে কৃষি জমিতে কারখানা গড়ে তোলে মিল কর্তৃপক্ষ। উৎপাদন শুরুর পর রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত বর্জ্য ও অপরিশোধিত পানিচাষীদের জমিতে ফেলায় নষ্ট হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে এলাকায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে নানা চর্মরোগও।
সরেজমিনে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা ও কারখানার দূষিত বর্জ্যের কারণে স্থানীয় ভদ্রার বিলের বুকজুড়ে এখন কচুরিপানার রাজত্ব। গ্রামবাসী জানায়, এক সময় কৃষাণ-কৃষাণীর কর্মচাঞ্চল্যতায় দিনভর মুখরিত হয়ে থাকত মুলাডুলির ভদ্রার বিল। শত শত একর জমি জুড়ে ফলত সোনার ফসল। এ ফসল দিয়ে জীবনজীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো কৃষক পরিবার। সেই বিল এখন নীরব নিস্তব্ধ। তিন বছর ধরে এ বিলের কৃষি জমির ফসলের ওপর নির্ভরশীলদের জীবন নিদারুণ অর্থকষ্ট ও হতাশায় ভরে গেছে।
মুলাডুলি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আজিজ জানান, ভদ্রার বিল থেকে পানি নিষ্কাশন ক্যানেল হয়ে নদীতে গিয়ে মিশত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য দুটি মৌসুমে গ্রামের চাষীরা বছরে দুটি ফসল পেতেন। কিন্তু, রশিদ পেপার মিলসহ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে, পানি নির্গমনের পথ বন্ধের কারণে সৃষ্ট স্থায়ী জলাবদ্ধতায় গত তিনবছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়েছে উপজেলার সরাইকান্দি, লক্ষ্মীকোলা, চাঁদপুর, দরগাপাড়া, কারিগরপাড়া, দেবীপুর, বহরপুর, রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রায় ৫০০ একর কৃষিজমি। রাসায়নিক মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি পুকুরে মেশায় মারা যাচ্ছে মাছও। তিনি আরো জানান, কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার চেয়ে উল্টো মিলেছে ভয়-ভীতি ও হুমকি।
নীতিমালা মেনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদন চলছে জানালেও সংবাদকর্মীদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সাক্ষাতে কথাও বলেননি রশিদ পেপার মিল মালিক কিংবা তার কোনো প্রতিনিধি। পরে কয়েকদিন টানা চেষ্টা করে মুঠোফোনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জহিরুল হকের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, পেপার মিলে জার্মান প্রযুক্তির ইটিপি ব্যবহার হচ্ছে। মেশিন এডজাস্ট করতে কিছুটা অসুবিধা হওয়ায় পানি অন্যের জমিতে গিয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে। একটি পুকুরের তিন চারটি মাছ মারা গেছে এ নিয়ে মাথাব্যথার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে শিল্পায়নের সুযোগ নেই। কৃষি প্রধান এলাকায় ফসলি জমিতে কীভাবে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে-তা খতিয়ে দেখা হবে।