করোনাভাইরাসের মহামারীতে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এর আগের বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিলে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে দেওয়া লকডাউনে গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি প্রায় বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি খাত বড় ধরনের হোঁচট খায়। রপ্তানি নেমে যায় মাত্র ৫২ কোটি ডলারে। ওই বিপর্যয় কাটিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল ৩১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
গত রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে ৫ এপ্রিল থেকে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ সব শিল্পকারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখে। ফলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তাই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছুঁলো আকাশ। যদিও ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সেই তুলনায়ও রপ্তানি বেড়েছে এক দশমিক ৬২ শতাংশ। তার মানে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক পর্যায়ে আছে দেশ।
ইপিবির পরিসংখ্যান আরো বলছে, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমেছে।
সার্বিকভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) তিন হাজার ২০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আট দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ছয় দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছিল তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি। অন্যদিকে হিমায়িত মাছসহ সব ধরনের হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমে ৯ শতাংশের মতো। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ছয় শতাংশের বেশি রপ্তানি কমেছে। ফার্নিচারের রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি কমেছে জাহাজ শিল্পে। এই খাতে রপ্তানি কমেছে ৯৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১০৩ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ৯৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৪ শতাংশের বেশি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৭৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য, ৪৩ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য, ৩৯ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়া পণ্যে সাড়ে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অবশ্য চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আরো ৮৯৩ কোটি ডলার প্রয়োজন। মে ও জুন মাসে এই পরিমাণ রপ্তানি অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময়ই লকডাউন ও সাধারণ ছুটির বিপক্ষে ছিলাম। মানুষকে যদি তার আয় থেকে দূরে রাখা হয়, সে কতদিন চলতে পারবে। তাদের কাজের মধ্যে রাখতেই হবে। করোনা প্রতিরোধের দ্বিতীয় বিধিনিষেধে আগের মতো সব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি, এটা ভালো দিক। যার ইতিবাচক প্রভাব এপ্রিলে পাওয়া গেল।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





