সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহের কিছু অংশ সৌদি কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলের বাগানে দেখা গেছে। তুরস্কের স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে মরদেহের অংশ পাওয়ার সংবাদ প্রকাশ করেছে স্কাই নিউজ। আজ মঙ্গলবার তুরস্কের বিরোধী বামপন্থি এক রাজনীতিবিদ দোগু পারিনসিক স্থানীয় মিডিয়া ইয়েনি সাফাকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রথম অবহিত করেন।
তুর্কি ওই মিডিয়া জানায়, ধারণা করা হচ্ছে খাশোগির আঙুল কেটে ফেলার পর হত্যাকারীরা তাকে কনস্যুলেট ভবনের অন্য একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে একটি টেবিলের ওপর রেখে টুকরা টুকরা করা হয়। এছাড়া মিডিয়াটি দাবি করেছে, ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত একটি অডিও টেপে ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওতায়বির কণ্ঠস্বর শোনা যায়। খাশোগিকে নির্যাতনের সময় তিনি বলছিলেন, ‘বাইরে গিয়ে এটা করো। তোমরা আমাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছো।’ এর বিপরীতে আরেকটি কণ্ঠস্বরকে ওতায়বিকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, ‘সৌদি আরবে এসে বেঁচে থাকতে চাইলে চুপ থাকো।’
অনলাইন পত্রিকা মিডল ইস্ট আই এক রিপোর্টে জানায়, হত্যাকারীরা তাদের মিশনের সফলতা তুলে ধরতে সৌদি যুবরাজের কাছে খাশোগির হাতের আঙুল পাঠিয়েছে। এমন দাবির পেছনে কারণ হিসেবে পত্রিকাটি যুবরাজের সমালোচকবিরোধী কট্টর অবস্থানকে তুলে ধরে। যদিও এ ব্যাপারে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।
হত্যার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্কাইপের মাধ্যমে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সৌদ আল কাহতানিই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দেশটির দুই গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আলজাজিরা। এই কাহতানিই যুবরাজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। যুবরাজকে এড়িয়ে কাহতানিকে খাশোগি হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বানানোর যে চেষ্টা চলছে তাতে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না সৌদি কর্মকর্তারাই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সৌদি রাজপ্রাসাদের সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, এ ঘটনায় যুবরাজকে ক্ষমতা থেকে সরানো না হলেও তার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। বাদশাহ নিজে সালমানকে সুরক্ষা দিচ্ছেন বলে এই দফায় হয়তো তিনি বেঁচে যাবেন।
এদিকে তুরস্কের টেলিভিশন চ্যানেল এ হাবেরের ড্রোন দিয়ে নেওয়া ফুটেজে দেখা যায়, খাশোগি হত্যার পরদিনই ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের তিন কর্মকর্তা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাগানে একপাশে আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। মিডিয়াটি দাবি করে, খাশোগি হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি পোড়াচ্ছিলেন ওই কর্মকর্তারা।
তার্কিশ গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের হত্যাকারী দলের একজন মেজর জেনারেল মাহের আবদুল আজিজ মুতরিব, যিনি এর আগে ব্রিটেনে কূটনীতিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। খাশোগিকে হত্যার দিন মুতরিব মোট ১৪ বার মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং এর মধ্যে সাতবারই সৌদি যুবরাজ সালমানের কার্যালয়ে ফোন করেন। গোয়েন্দা সংস্থার এমন দাবির পর খাশোগি হত্যার খবর যুবরাজ সালমান জানতেন না এমনটা ভাবতে নারাজ সমালোচকরা। মুতরিবকে চলতি বছর বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুবরাজ সালমানের সঙ্গে দেখা যায়।
আজ মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, খাশোগিকে হত্যার আগের দিন ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ক্যামেরা খুলে ফেলা হয়েছিল। ঘটনার বিভিন্ন আলামত দেখে বোঝা যায়, খাশোগিকে হত্যার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। গত রোববার এক সমাবেশে এরদোগান বলেছিলেন, তিনি সংসদে সৌদি আরবের সব ‘নোংরামি’ এবং হত্যাকাণ্ডের ‘নগ্ন সত্য’ তুলে ধরবেন। কিন্তু আজ মঙ্গলবার সংসদে তেমন কোনো নগ্ন সত্য প্রকাশ করেননি বলে মনে করছেন সমালোচকরা। কারণ, এরদোগান যা বলেছেন তা ইতোমধ্যেই তুর্কি মিডিয়াগুলোতে প্রকাশ হয়েছে। তবে ভাষণে এরদোগান এই ঘটনা তদন্তে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন যুবরাজ সালমানের অন্যতম সমালোচক ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি। প্রথমে সৌদি কর্তৃপক্ষ খুনের ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে তা স্বীকার করে নেয়। প্রথম বিবৃতিতে সৌদি আরব জানায়, ‘হাতাহাতিতে খুন’ হন খাশোগি। এরপরের বিবৃতিতে জানায়, ‘ধস্তাধস্তির সময় শ্বাসরুদ্ধ’ হয়ে মারা যান তিনি।