উৎসব-উদ্বেগে মনোনয়নপত্র জমা

লোগো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে

নির্বাচন

উৎসব-উদ্বেগে মনোনয়নপত্র জমা

# সর্বোচ্চ ঢাকা-১৭, সর্বনিম্ন মাগুরা-২ আসনে # সারা দেশে জমা দিয়েছেন ৩০৯৫ প্রার্থী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩ হাজার ৯৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা হয়েছে ৩ হাজার ৫৬টি। আর অনলাইনে জমা দেওয়া হয়েছে ৩৯টি। তবে অনলাইনে মাত্র ২৩টি মনোনয়নপত্র ঠিকঠাকভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ইসি। গতকাল বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারা দেশের রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ছিল।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রেস বিফ্রিংয়ে মনোনয়নপত্র জমার হিসাব জানান। তার দেওয়া তথ্যমতে, রংপুর বিভাগে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৩৬১টি, রাজশাহীতে ৩৫৩, খুলনায় ৩৫১, বরিশালে ১৮২, ময়মনসিংহে ২৩৬, ঢাকায় ৭০৮, সিলেটে ১৭৭ ও চট্টগ্রামে ৬৮৮ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সর্বোচ্চ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ঢাকা-১৭ আসনে ২৭ জন। আর সর্বনিম্ন মনোনয়নপত্র পড়েছে মাগুরা-২ আসনে ৪ জন।

সচিব বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোথাও কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোন দল থেকে কতজন, কোন জোট বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কতজন, তা আজ জানা যাবে।

এদিকে সারা দেশে অনেকটাই উৎসব আমেজে মনোনয়নপত্র জমাদান প্রক্রিয়া শেষ হলেও, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাও ছিল বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের। গ্রেফতার আতঙ্কে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাননি কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শরীফুল আলম। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন মোশাররফ হোসেন খোকন।

বুধবার কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ক্যানসারে আক্রান্ত অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দলের কারারুদ্ধ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে বগুড়া-৬ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষেও। বগুড়া-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঐক্যফন্টের প্রার্থী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় ৪ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শেষ দিনসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সারা দেশে ৫১টি আসনের বিপরীতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা মনোনীত ৫১ প্রার্থী দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে বুধবার বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৭, প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬, যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়ক ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচএম গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ ও ঢাকা-১৫, এমএম শাহীন মৌলভীবাজার-২, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী সুনামগঞ্জ-১ আবদুর রউফ মান্নান নওগাঁ-২ এবং মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ৫ জন, রাজশাহীতে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন, ঢাকা বিভাগে ২৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ছিল দলীয় প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড়।

এদিন ঢাকা-১৮ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতরে সীমিত সংখ্যক কর্মী নিয়েই প্রবেশ করেন তারা।

একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাদেক খান ও বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-১২ আসনে আনোয়ারুজ্জামান (বিএনপি), আসলামুল হক (আ.লীগ) ঢাকা-১৪-তে, ঢাকা-৮ আসনে আরিফুর রহমান (জাতীয় পার্টি), ঢাকা-১৬ আসনে ইলিয়াস আলী মোল্লা (আ.লীগ), ঢাকা-১০ শামসুল আলম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ও অন্যান্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এর আগে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। সেবার ছিল ৩ হাজার ৮৫৫টি। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৩ হাজার ৯৩ জন, ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে ২ হাজার ৫৬৩ জন, ২০০৮ সালে নবম সংসদে ২ হাজার ৪৬০ জন এবং দশম সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ১০৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads