ইফতার বিক্রিতে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

ব্যবসার খবর

ইফতার বিক্রিতে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১০ মে, ২০২১

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে ইফতারির বাজারেও। ইফতারির ঐতিহ্যখ্যাত পুরান ঢাকা কিংবা অভিজাতখ্যাত গুলশান-বেইলি রোডেও ইফতার বিক্রিতে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় লাখখানেক মৌসুমি ইফতার ব্যবসায়ী এই এক মাস ইফতারি ব্যবসা করেন। করোনার কারণে মৌসুমি এসব ব্যবসায়ী পড়েছেন বিপাকে। কিছু ব্যবসায়ী শুধু রমজানের আয় দিয়ে পুরো এক মাস চলতেন। বিকল্প আয় না থাকায় তারা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। এ ছাড়া ইফতারকেন্দ্রিক কয়েক হাজার বাবুর্চি, কারিগর ও ডেকোরেশনকর্মীর কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রাজধানীর বেইলি রোড, গুলশান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছর মূল সড়কের পাশে বড় আকারে ইফতার বিক্রি হলেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। সেখানে এবার স্বল্প পরিসরে বিক্রি হচ্ছে ইফতারসামগ্রী। তবে এলাকাভিত্তিক ইফতারের দোকানগুলো আগের মতোই পসরা সাজিয়ে বসেছে। সে ক্ষেত্রে খুব একটা ক্রেতার দেখা মিলছে না। নেই আগের মতো বেচাকেনাও। দোকানিরা জানান, জিলাপি, হালিম, চপ, বোরহানি, দই, আলুর চপ, পেঁয়াজু ও রোলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনতে দোকানে আসেন ক্রেতারা। এবার সেসব ইফতারসামগ্রী কিনতেও খুব একটা দোকানে আসছেন না সাধারণ মানুষ। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতার বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন দোকানিরা।

যাত্রাবাড়ীতে ইফতারসামগ্রী বিক্রেতা সামসুল আলম বলেন, প্রতি বছর আসরের নামাজের পর কোনো দিকে তাকানোর সময় পেতাম না। আর এ বছর কোনো কাস্টমারই দেখছি না। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব করছি; তারপরও সাড়া দিচ্ছে না মানুষ।

কথা হয় ইফতার বিক্রেতা আসলামের সাথে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমি ইফতারের ব্যবসাটা করি। এবারের অবস্থা খুবই খারাপ। গত বছর তো লকডাউনেও কিছুটা বেচাকেনা ছিল। কিন্তু এবার তাও নেই। এত অল্প ইফতার নিয়ে বসছি; তাও বিক্রি করতে পারছি না। গত ২৪ দিনের অবস্থা একই। মিরপুর-১ নম্বরে ইফতারের দোকানের সামনে কথা হয় মৌসুমি ইফতার ব্যবসায়ী শহিদুল আলমের সাথে। তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে তিনি মহল্লার ভেতরে ইফতার বিক্রি করেন। বছরের বাকি ১১ মাস অন্য ব্যবসা করলেও এই এক মাস ইফতারি বিক্রি করে তিনি যে লাভ করতেন তা দিয়ে অনায়াসে দুই মাস চলতে পারতেন। কিন্তু

 

গত বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইফতার বিক্রি করতে না পারলেও এবার ইফতারের পসরা সাজিয়েছেন। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

রমজানে রাজধানীতে ইফতার মানেই চকবাজার। শুধু দেশ নয়, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খানদানি ইফতারসামগ্রীর সুনাম দেশের বাইরেও রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চকবাজারের ইফতারিতে এমন কিছু পদ আছে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া অভিজাত শ্রেণির জন্য বেইলি রোডের ইফতারের তুলনা নেই। বরাবরের মতো এবারো তারা ইফতারি বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনায় তাদের সব শেষ করে দিয়েছে।

চকবাজারের শিকদার কাবাবের মালিক হামিদুর রহমান জানান, প্রতি বছর জমজমাট আয়োজন থাকত রমজানে। প্রতি বছরই ক্রেতা আকর্ষণের জন্য ভিন্ন স্বাদের নতুন নতুন আইটেম তৈরি করতেন বাবুর্চিরা। এ ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকার লোকজন ছুটে আসতেন। এবার রমজানটা একদম ফ্যাকাশে। মানুষের মনে শান্তি নেই। করোনার ভয়ে কেউ বাইরে আসেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষের ভোগ বাড়লে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর রমজানকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে ভোগের অন্যতম হলো ইফতার। এ ইফতার বিক্রি বন্ধ হওয়ায় যে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বিকল্প কিছু করারও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads