ধর্ম

আত্মশুদ্ধি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম

  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি, ২০২১

আবু তালহা রায়হান

 

 

আত্মশুদ্ধি একটি মহৎ গুণ। আদর্শ স্বভাব। বিশুদ্ধতার পরিচয়। আত্মশুদ্ধি মানুষকে বাঁচতে শেখায়। প্রাণে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। হকের পথে মানুষকে জাগিয়ে তোলে। সঠিক পথে চলতে শেখায়। অন্তরে খোদাভীতি তৈরি করে। দাম্ভিকতা থেকে মুক্তি দান করে। আত্মশুদ্ধি আর পর্যালোচনার সমন্বয়েই একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। আত্মশুদ্ধি মানে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন রাখা। নিজের নাফসকে পবিত্র করে তোলা। বিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী হওয়া। মানুষের বাহ্যিক পাপসমূহের মতো আত্মিকভাবেও অগণিত পাপ-পঙ্কিলতা আছে। আর এসব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রাণ থাকার অন্যতম পন্থা হলো আত্মশুদ্ধি। আল্লাহ সুবাহানাহুতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় সেই ব্যক্তি সফলকাম, যে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করেছে।’ (সুরা : শামস-৯)

মানুষের সুপথ কিংবা বিপথগামী হওয়ার প্রধান প্রদর্শক হলো নিজের নাফস তথা আত্মা। যে ব্যক্তি নাফসের চাহিদামতো তার জীবন পরিচালনা করবে সে কখনোই সুখী ও সফল হতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি অন্তরে খোদাভীতি লালন করে পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজের জীবন গঠন করবে, তার জন্য ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতেই রয়েছে শান্তি ও সফলতা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করতে চান, তার অন্তর ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে বিপথগামী করতে চান, তার অন্তর অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন। তার কাছে ইসলামের অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।’ (সুরা : আনআম-১২৫)।

যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ নিষ্পাপ হওয়ার পরও তাঁরা নিজেদের সম্পর্কে আত্মশুদ্ধিমূলক আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন। মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে নিয়ে আত্মশুদ্ধির পর্যালোচনা করেছেন। বাহ্যিকভাবে ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ, মদ্যপান, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, গুম, খুন, গিবত ইত্যাদি যেমন পাপ কাজ তেমনই অন্তরে সেগুলোর চিন্তা-পরিকল্পনা করাও পাপ। ঈমানদারকে যেভাবে শরিয়তের বিধান পালন করতে হয় তেমনই চিন্তাজগতের পাপ থেকেও দূরে থাকতে হয়। এর জন্য ইখলাস, তাকওয়া, সবর, শোকর ইত্যাদির বিধান দেওয়া হয়েছে। আর এসব বিধানের চর্চা ও সে অনুযায়ী আমল করার নামই হলো আত্মশুদ্ধি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাজকিয়ায়ে নফস বা আত্মশুদ্ধি। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করে, ‘আল্লাহ ঈমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে আত্মশুদ্ধি করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।’ (আল ইমরান-১৬৪)।

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘জেনে রেখো, মানুষের দেহের মধ্যে একখণ্ড মাংসপিণ্ড আছে, যখন তা সংশোধিত হয় তখন গোটা দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দূষিত হয় তখন পুরো দেহ দূষিত হয়ে যায়। মনে রেখো, সেটাই কলব বা অন্তর।’ (বুখারি ও মুসলিম)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের শরীর বা আকৃতির দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতিই লক্ষ করেন। এরপর নবীজি উপস্থিত সাহাবাদের অন্তর দেখানোর জন্য আঙুল দিয়ে তাঁর বুক মুবারকের দিকে ইশারা করেন।’ (মুসলিম শরিফ)।

উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষের অন্তরের পরিচ্ছন্নতা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম পথ। অন্তরের অপরিচ্ছন্নতা মানুষকে বিপথগামী করে। আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। আর তাই আমাদের সকলের উচিত বাহ্যিক গোনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি অন্তরে এসবের চিন্তা লালন করা থেকেও বিরত থাকা। পর্যালোচনা করা। নিজেকে নিজের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা। নিজে নিজের আত্মশুদ্ধি করা এবং কোনো আল্লাহওয়ালার কাছ থেকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর হুকুম আহকাম মেনে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে হেদায়াত নসিব করুন। আমীন।

 

লেখক : ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads