ধর্ম

আজান : শিক্ষা ও তাৎপর্য

  • প্রকাশিত ৬ অগাস্ট, ২০২১

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

আজান শুনতে কার না ভালো লাগে। অনেক সময় এমনো তো হয়। আজানের অপূর্ব  সুরের মূর্ছনায় আমাদের অন্তরে স্মরণ হয়ে যায়, সেই অনন্ত আসীম  জীবনের কথা। যেখানে আমারা অবস্থান করবো যুগের পর যুগ। যার কোনো অন্ত নেই। সেই অসীম, অনন্তের পথে পারি জমাতে হবে আমাদেরকে এদুনিয়ার সকল পাঠ চুকিয়ে অযাচিতভাবেই কোনো একদিন। আর আমরা আদিগন্তের কথা ভুলে গিয়ে বিভ্রম হয়ে ছুটোছুটি করছি, সেই আধিপত্যের মালিক আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা করে।

 

আমরা রোজ পাঁচবার রবের সাক্ষাতে ধন্য হই। স্বস্তি পাই আমাদের তনু মন। দুনিয়ার সকল দুঃখ যাতনা ভেদ করে অন্তরে আনায়ন করে স্বস্তি। মুয়াজ্জিন সুমধুর কণ্ঠে আহ্বান করে। রবের দরবারে সাক্ষাতের কি এক অসম্ভব সুন্দর আহ্বান। যারপরনাই আল্লাহর স্মরণ হতেই অন্তরের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়। ধুকপুক করে সেই ছোট্ট  হূদপিণ্ডটাও।

কারণ এটা যে দুনিয়ার কোনো রাজা মন্ত্রীর ডাক নই বরং এরচেয়েও আরো অনেক বড় মহান সত্তার ডাক। যার হুকুমে বইয়ে চলে মেঘমালা এবং প্রবাহিত বাতাস এমনকি সমুদ্রের বিশাল উত্তাল ঢেউয়ের তরঙ্গমালা।

 

আজানের ধ্বনিগুলো নিরন্তর আমাদেরকে মনে রেখাপাত ঘটায়।

আমাদেরকে মুয়াজ্জিন একথাও বলে দেয় যে, তোমরা রবের দিকে মনোনিবেশ করো। বিনয়ী ও নম্রতার সাথে জীবন চলার সিঁড়িতে আরোহণ করার প্রবল মনোবাসনা নিয়ে। বাক্যগুলো কি নিদারুণ। এই শব্দের ভেতরে লুকায়িত আছে সফলতার চাবিকাঠি। আজানের বাক্যাংশের মাধ্যমে একথার শিক্ষাও পেয়ে থাকি আমরা-ইহকালীন জীবনে কার আনুগত্য করব আর কার ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখব; সেই কথাও। কত চমৎকার শিক্ষা আমরা রোজ পাঁচবার পাই।

 

মুয়াজ্জিন আমাদেরকে এ কথা বলে দেয় যে, নামাজের জন্য এসো। এটাতেই সুখ এটাতেই দুনিয়া পরকালের যত প্রাপ্তি। তাই নামাজের মাধ্যমে যত চেয়ে নিতে পার। আজানের মাধ্যমে আমরা ইবাদত করার খোরাক পাই। আরো পাই আগ্রহ উদ্দীপনা। নামাজের দিকে মনোনিবেশ করার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আজান। রবের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা যে দুনিয়ার কোনো বানানো কথা নই। যা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করা হয়েছে।

 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল যেহেতু একেবারে লঘু ছিল  সেহেতুে নামাজের ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আর তখন সাহাবিরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিতই থাকতেন। তাই ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন তেমন একটা হতো না। কিন্তু হিজরতের পর যখন মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। তখন সবার জন্য একই সময়ে উপস্থিত হওয়াটা অসুবিধে  দেখা দেয়। সবাই যাতে একই সময়ে উপস্থিত হতে পারেন। তা নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের সাথে পরামর্শ সভায় বসলেন। তখন সেই পরামর্শ বৈঠকে কেউ আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে লোকদিগকে আহ্বানের কথা বললেন। আবার কেউ বললেন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়ার জন্য। কেউ কেউ আবার  বললন ঘণ্টা বাজানোর কথা।

কিন্তু আগুন জ্বালানো তো অগ্নিপূজকদের রীতি। শিঙ্গায় ফুঁকানো ইহুদিদের নীতি। ঘণ্টা বাজানো খ্রিস্টানদের পন্থা। ফলে নিমিষেই সেসব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় এবং ওইদিন কোনো সমাধান ছাড়াই সবাই সবার ঘরে ফিরে যায়। সে রাতে একজন সাহাবি স্বপ্নে দেখেন এক ব্যক্তি তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করছে। তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো এই শিঙ্গাটি আমার কাছে বিক্রি করবে? তিনি বললেন আপনি এটা দিয়ে কি করবেন! আমি বললাম  মানুষকে নামাজের জন্য ডাকব। তিনি বললেন তার চেয়ে ভালো হবে আমি আপনাকে কিছু চমকপ্রদ বাক্য শিখিয়ে দেই। ফলে তিনি সেই সাহাবিকে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দেন। যিনি স্বপ্নে এমনটি দেখে ছিলেন তার নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন আব্দে রাব্বি (রা.)। সেখান থেকেই রীতিমতো আজানের প্রচলন ঘটে। কেউ কেউ বলেন হিজরতের আগেই আজানের প্রচলন ছিল।

আজান প্রবর্তনের বেশ অনেকগুলো হেকমত বর্ণিত আছে। তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটা উল্লেখ করা হলো। আজানের দ্বারা মহান আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ। মাহাত্ম্য। শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা হয়। আজানের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বীকারোক্তি এবং প্রামাণ্যতা  মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়।

আজানের মাধ্যমে নামাজ যে ইসলামের একটি অত্যাবশকীয় বিধান তা বিশ্বাসী- অবিশ্বাসী সমুদয় মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়। আজানের মাধ্যমে গণমানুষের মাঝে  ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি হয়। আজানের মাধ্যমে উভয় জাহানের কল্যাণের ঘোষণা করা যায়। (সূত্র বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি)

 

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আনওয়ারিয়া মাদরাসা শ্রীপুর গাজীপুর

সদস্য, বাংলাদেশ নবীণ লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads