আখাউড়া স্থল বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

আখাউড়া স্থল বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হচ্ছে

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১ জানুয়ারি, ২০২১

করোনাভাইরাসের থাবায় ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। বর্তমানে করোনাপরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করায় এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রমিকদের কোলাহল, আর আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের পণ্য পাঠানোর ব্যস্ততাও। 

প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। তবে এখন যে কয়টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে মাছের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহামারির কারণে এ স্থলবন্দরে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ৱস্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর রড-সিমেন্ট আমদানি বন্ধ করে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া তিন মাসেরও বেশি সময় মাছ রপ্তানিও বন্ধ রাখেন তারা। কিন্তু এখন রড-সিমেন্ট রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি মাছ রপ্তানির পরিমাণও আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে এই আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক না হলে ও উভয়দেশে আটকে পড়া পাসপোর্টধারী যাত্রী কুটনৈতিক, ব্যবসায়ী ও মেডিকেল পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ১৯৯৫ সাল থেকেই আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্য ত্রিপুরা রাজ্য থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে যায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিক, মাছ, তুলা, ভোজ্য তেল ও খাদ্য সামগ্রীসহ অর্ধশত পণ্য রফতানি হতে থাকে ভারতের  আগরতলায়। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ার পর থেকেই ধস নামতে থাকে আখাউড়া স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্যে।

তবে রফতানির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরও গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের অন্ত:ত ৪৫-৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো।  করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর রপ্তানির পরিমাণ আরও কমে যায়। ভারতে দৈনিক মাত্র ২০ থেকে ২৫ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। শুধু ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, মাছ ও খাদ্যসামগ্রী রফতানির মাধ্যমে কোনো রকম সচল থাকে এ স্থলবন্দর। তবে মাস দেড়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ আশানুরূপ হারে বেড়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের অর্ধশত ট্রাক মাছ, রড, সিমেন্ট, কয়লা, তুলা ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. রাজীব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দিকে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশিদের দেয়া পণ্য রপ্তানির অর্ডার বাতিল করতে থাকেন। এতে করে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তখন রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু এখন আবার রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। রফতানির পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সেটি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

ব্যবসায়ী মো. ফারুক মিয়া বলেন, মাস দুয়েক ধরে মাছের চাহিদা বেড়েছে। এখন দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ টন বিভিন্ন প্রজাতির (ইলিশ ও চিংড়ি ব্যতিত) মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। আর প্রতি কেজি মাছের গড় মূল্য আড়াই ডলার।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ২ মাস আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে করে অন্তত ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তবে মাস দুয়েক ধরে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ভোজ্য তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মাছ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন তারা। এতে করে স্বাভাবিক রূপে ফিরছে আখাউড়া স্থলবন্দর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads