সুখী আক্তার
বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্রিকেট দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া বেশ পরিচিত। কিন্তু উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে অধিক জনপ্রিয় অস্ট্রেলিয়া। তাই দেশের শিক্ষার সমাপ্তি শেষে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর দেশের হাজারো শিক্ষার্থী পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের তৃতীয় জনপ্রিয় দেশ। বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। অন্যান্য সমমানের দেশের তুলনায় খরচও কম। অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য ও আবেদন প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো :
প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা : স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হলে উদ্দেশ্য হতে হবে শিক্ষা। আসার উদ্দেশ্য আবেদনপত্রে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। সবার আগে সত্যিকার মেধাবী হতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নিজের খরচ বহনের কথাটি শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করতে হবে। বোনাস হিসেবে ধরতে পারেন পার্টটাইম চাকরি।
পড়াশোনার ভাষা : অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণ ছাড়া শিক্ষার্থী হিসেবে ভিসা পাওয়া অসম্ভব। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষায় আগ্রহীদের অবশ্যই ইংরেজিতে আইইএলটিএস-এ ৫.৫ অথবা টোয়েফল-এ ৫৫০ স্কোর থাকতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, এমবিএ বা রিসার্চ প্রোগ্রামে আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৬ বা টোয়েফল স্কোর ৬০০ থাকতে হবে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শর্তে বেশি স্কোর করারও প্রয়োজন পড়ে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকে।
বিষয় নির্বাচন : উচ্চশিক্ষার জন্য নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে বিদেশে যাবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। বিষয় পরিবর্তন করা নিয়ে অনেকের ভিসা বাতিল হয়ে যায় অনেক সময়। অস্ট্রেলিয়া সরকারের পেশার চাহিদা তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকে। সে বিষয়ে পড়াশোনা করলে চাকরি পেতে সহজ হবে। ACCA, LLB, MBA, Advanced Diploma, Health Student এবং Engineering ডিগ্রি অর্জনকারীদের স্থায়ীভাবে অভিবাসনের জন্য আবেদনের সুযোগ থাকবে বেশি।
স্পনসর বা গ্যারান্টার নিশ্চিত : স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আসতে হলে যাবতীয় খরচ বহনের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকে টাকা দেখাতে হয়। সাধারণত এদের ‘স্পনসরশিপ বা গ্যারান্টার’ বলে। তবে অভিভাবকের সামর্থ্য না থাকলে, এমন একজন স্পনসরের প্রয়োজন, যিনি আবেদনকারীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন ব্যাংকে। কিন্তু কোনো নগদ অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সাধারণত ছয় মাসের জন্য স্পনসর দেখাতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা : অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষাবর্ষ শুরু জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। ব্যাচেলর কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর ও ব্যাচেলর সার্টিফিকেট কোর্সের মেয়াদ ৬ মাস। ব্যাচেলর ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ ১ বছর, স্নাতকোত্তর কোর্স ও স্নাতকোত্তর রিসার্চ কোর্সের মেয়াদ ২ বছর। ডক্টরাল কোর্সগুলোর মেয়াদ ৩ বছর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন কোর্সে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে।
জীবনযাপন ও অন্যান্য খরচ : বিদেশি শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ক্যাম্পাসের ভেতরে বা বাইরে থাকতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস। ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থীর এক বছরের খরচ হিসেবে ১৯ হাজার ৯৩০ ডলার দেখাতে হবে। কোর্স ফি বাবদ তিন বছরের জন্য ৫০ হাজার ডলার। তবে এক বছরে মোট ১৬ হাজার ৬৬০ ডলারের সঙ্গে অন্যান্য খরচ স্পনসরের ব্যাংকে দেখাতে হবে। পার্টটাইম চাকরির জন্য শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা সময় পায়। ছুটির সময় ফুলটাইম। এখানে একজন শিক্ষার্থী কাজ করে পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারে।
আবেদন : ভর্তির জন্য সরাসরি নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভিস সেন্টারে ভর্তি তথ্য ও ফরম চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোনীত এজেন্টদের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র চিঠি, ফ্যাক্স কিংবা ই-মেইলে পাঠানো যেতে পারে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন ফরম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যাবতীয় শর্ত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ফরমটি পূরণ করে যাবতীয় কাগজপত্রসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ আবেদন ফি জমা দিতে হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপনাকে ভর্তি করে নিলে তার প্রমাণস্বরূপ আপনার ঠিকানায় অফার লেটার পাঠাবে এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে আপনাকে ভিসা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে।
ভিসা প্রসেসিং : অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপ, শিক্ষাগত কাগজপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য খরচ নিজেরা বহন করে থাকে। এখানে এসে অনেক শিক্ষার্থী রাত-দিন কাজ করে থাকে। পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে তাই দেশে থাকতেই কঠোর পরিশ্রম করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এখানে কাজের ফাঁকে লেখাপড়া নয়, লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকেই কাজ করতে হয়। ক্লাসে উপস্থিতির হার ও পরীক্ষায় পাসের গরমিল হলে ভিসা যে কোনো সময় বাতিল হয়ে যেতে পারে।