বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের গ্যাসের কারণে। এসিতে ব্যবহূত গ্যাস আগুনে পুড়ে নতুন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা মানুষের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়। যে কারণে নিঃশ্বাস নিতে না পেরে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হওয়া মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এসি নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন জানান, এসিতে সাধারণত দুই ধরনের গ্যাস থাকে। কোনো এসিতে ব্যবহার করা হয় আর-২২ গ্যাস, কোনোটিতে আর-৪১০। এই দুই ধরনের গ্যাসের কোনোটিই আগুন জ্বলতে সহায়তা করে না। তবে আর-২২ গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এলে নিজের রূপ পাল্টে উৎপন্ন করে নতুন গ্যাস। এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র যন্ত্রণার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আর-২২ গ্যাসের ঝুঁকি বিবেচনায় এসিতে এই গ্যাসের ব্যবহার কমে এসেছে।
এসি নিয়ে কাজ করছে এমন অনেকে আরো জানিয়েছে, বর্তমানে বাজারে আর-৪১০ গ্যাস আসছে বেশি। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের এসিতে এখন এই গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আর-২২ গ্যাস নতুন করে বাজারে তেমন না এলেও আগে থেকে এর প্রচুর মজুত রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আর-২২ গ্যাসে এমনিতেই সমস্যা আছে। আগুনে না পুড়েও যদি এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে কারো শরীরে যায়, তাহলেও তার ক্ষতি হবে অবশ্যই। আগুনে পুড়লে অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়।’ একই রকম তথ্য জানান ঢাকা এসি সেন্টারের পরিচালক খোকন রাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা তো গ্যাস যে পোড়ে তা দেখি না। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানি গ্যাসটা মারাত্মক ক্ষতিকর। এসিতে গ্যাস ভরার সময় কোনোভাবে তা হাত বা শরীরের কোনো অংশে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থান পুড়ে যায়। এই গ্যাস যদি কারো নাক-মুখ দিয়ে ঢোকে, তাহলে কী হতে পারে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।’ আর-২২ গ্যাস পরিবর্তন করে সেখানে আর-৪১০ গ্যাস ব্যবহার করা যায় কি না জানতে চাইলে খোকন রাজ জানান, সুযোগ যে নেই, তা নয়। তবে গ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে এসির কম্প্রেসার পরিবর্তন করতে হবে। আর তা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। একটি দুই টন বা ২৪ হাজার বিটিইউ আকারের এসিতে প্রায় দেড় কেজি পরিমাণ গ্যাস থাকে। অগ্নিকাণ্ডে এসি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর ভেতরে থাকা গ্যাস বের হয়ে আসে এবং তা বাতাসে অক্সিজেনের জায়গা দখল করে নেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আর-২২ গ্যাসের কোনো এসি এখন বাজারে আসছে না। বর্তমানে নতুন করে যে এসিগুলো বাজারে আসছে তার অধিকাংশেই ব্যবহার করা হচ্ছে আর-৪১০ গ্যাস। আর-২২ ও আর-৪১০ গ্যাসের মধ্যে একটি পার্থক্য হলো আর-২২ একটি ভারী গ্যাস। এতে দাহ্য পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে।
আর-২২ গ্যাসের দাহ্য পদার্থ পরিবেশের জন্যও ক্ষতি বয়ে আনে বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা। এসি তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ রক্ষা ও মানবস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এসির গ্যাস পরিবর্তন করেছে। তবে আর-২২ গ্যাস বাজার থেকে সম্পূর্ণ উঠে যেতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন ও অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে শ্বাস বন্ধ হয়ে। এই দুটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পেছনে গ্যাসের একটা বড় প্রভাব ছিল। অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া বাতাসে থাকা অক্সিজেনের জায়গা দখলে নেয়। এ সময় এসি এবং অন্যান্য নির্গত গ্যাস বাতাসে মিশে এক ভয়াবহ পরিবেশের সৃষ্টি করে। ওই স্থানের মানুষ বাতাস থেকে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করে চরম যন্ত্রণায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।